(ছবি-সংগ্রহীত)
স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার দায়িত্বে নিয়োজিত সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফ্লাইটে উঠে পড়া বুদ্ধিমান সেই শিশু জোনায়েদ শেষ পর্যন্ত আকাশে উড়েই ছাড়লো।। তার আকাশে উড়ার সপ্ন পূরণ করলো ওয়ালটনের শো–রুম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন প্লাজা।
ওয়ালটনের শো–রুম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষকতায় বৃহস্পতিবার বেলা একটায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজে চড়ে পর্যটন শহর কক্সবাজারে গেছে শিশু জোনায়েদ। তার সাথে ওয়ালটন প্লাজার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা লিটন হাওলাদার ও শিশুটির চাচা ইউসুফ মোল্লা। ১৮ মাস বয়সে মা হারা এই শিশু জেনায়েদ সমুদ্রসৈকতে ঘোরাফেরা করছে। কক্সবাজারের অভিজাত হোটেল ‘ওশান প্যারাডাইসে রাত্রীযাপন করবে সে।
বিমানে চড়ে কক্সবাজার পৌঁছানোর আনন্দে উচ্ছ্বাসিত শিশু জুনায়েদের সাথে শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে মোবাইল ফোনে কথা হলে সে জানায়, সেদিন ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার দায়িত্বে নিয়োজিত সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফ্লাইটে উঠে পড়েছিলাম ঠিকই কিন্ত উড়তে পারিনি। অবশেষে আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন ওয়ালটন। তারা আমাকে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে বিমানে করে নিয়ে আসলেন। আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমি ওয়ালটনের প্রতি কৃতজ্ঞ। বিমানে করে আকাশে উড়তে পেরে অনেক ভালো লাগছে। এখানে (কক্সবাজার) এসেও খুব ভালো লাগছে। সাগর দেখলাম, সাগরের পাড় দিয়ে হাঁটছি। অনেক আনন্দ পেয়েছি। শিশু জোনায়েদের চাচা ইউসুফ মোল্লা বলেন, এই প্রথম আমি বিমানে উঠলাম। ভাতিজার কারনেই আজ আমি বিমানে উঠতে পারছি। ওয়ালটন প্লাজা আমাদের ঢাকা থেকে কক্সবাজারে নিয়ে আসছে। এখানে অভিজাত হোটেলে রাখছে। ভালো রেস্টুরেন্টে খাইয়েছে।’
১২ বছর বয়সের এই শিশু জোনায়েদের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামে। তার বাবা ইমরান মোল্লা স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ও সবজি ব্যবসায়ী।
ওয়ালটন প্লাজার কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেছেন, শিশুটি বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে বিমানে ওঠার পর গণমাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন। গণমাধ্যমে উঠে আসা খবরে জানতে পারেন, শিশুটি বিমানের চালক (পাইলট) হতে চায়, তখন তাঁরা তাকে বিমানে চড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, শিশুটির বাবা ওয়ালটনের গ্রাহক। ওয়ালটন প্লাজায় ‘কিস্তি সুরক্ষা পলিসি’ থেকে গ্রাহকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।
এদিকে জোনায়েদের বাবা ইমরান মোল্লা বলেন , শিশু জোনায়েদের বয়স যখন দেড় বছর তখন ওর মা ওকে রেখে চলে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। ওদের সংসারে তখন খুব অভাব-অনাটন চলছিল। ওর বাবা ঠিকমতো বাজারঘাট করতে পারতেননা বিধায় মাঝে মধ্যে না খেয়েও কাটাতে হতো। এসব কারনেই জুনায়েদের মা ওকে রেখে চলে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছে। তার বিয়ের খবর শোনার পর শিশু জুনায়েদের বাবা ইমরান মোল্লাও বিয়ে করে নতুন সংসার সাজায়। সে ঘরে জন্ম নেয় এক ছেলে ও এক মেয়ে। জুনায়েদসহ ২ ছেলে আর এক মেয়েকে ঘিরেই তার সংসার। ওর সৎ মা হলেও অন্য ছেলে-মেয়ের মতোই ওকে ভালোবাসে। কিন্তু ছেলেটি দুরন্ত। উপস্থিত বুদ্ধি খুব বেশি। ওর মায়েরও উপস্থিত বুদ্ধি খুব বেশি ছিল। শিশুটি ওর মায়ের ধারা পেয়েছে। সুযোগ পেলেই পালিয়ে যায় বলেই চোখে চোখে রাখার জন্য বাড়ির পাশে আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি করেছি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার দিবাগত রাতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়েছিল শিশুটি।
এ ঘটনার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ১০ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এ ঘটনা তদন্তে কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
Leave a Reply