আজকের গোপালগঞ্জ প্রতিবেদক
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর কাশালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের প্রতারণায় ২টি পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। চাকরির প্রলোভন দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে একটি পরিবারকে পথে বসিয়েছেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান। অপর একটি পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়েও জমি লিখে দেন নি তিনি। বিভিন্ন স্থানে ধরণা দিয়েও নিঃস্ব পরিবার দু’টি কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। ইউপি চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় তার ছেলে মুকসুদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আজিজুর রহমান রিমু এলাকায় মাদকের ব্যবসা করছেন।
কাশালিয়া ইউনিয়নের হাজরাগাতি গ্রামের সুদেব ঢালী ওরফে মদন ঢালী বলেন, আমরা কৃষি কাজ করে কোন রকমে দিন আনি দিন খাই। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে আমার ছেলে মিল্টন ঢালীকে হাজরাগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী পদে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখান ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। ধার ও চড়া সুদে দেনা করে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে ইউপি চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেই । তিনি আমার ছেলেকে চাকরি না দিয়ে অন্যকে চাকরি দেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যস্থতায় চেয়ারম্যান আমাকে ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল ৪ লাখ টাকা ফেরৎ দেন। বাকী ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ১৫ দিনের মধ্যে ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেন। পাওনা টাকা চাইতে গেলে চেয়ারম্যান আমাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছেন। টাকা দেবে না বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছে। এ নিয়ে চেয়ারম্যান আমাদের একরে পর এক হয়রাণী করে আসছে। গায়ে পর্যন্ত হাত তুলেছেন। এখন আমি যাদের কাছ থেকে ধার দেনা ও সুদে টাকা এনেছিলাম, তারা টাকার জন্য আমার ওপর চাপ দিচ্ছে। তাদের টাকা ফেরত দেয়ার অবস্থা আমার নেই।
ননীক্ষির গ্রামের সুনিল বাড়ৈ অভিযোগ করে বলেন, আমরা গরীব কৃষক। ২৮ বছর আগে আমাদের গ্রামের ময়নাল ফকিরে মাধ্যমে ২ বিঘা জমি বিক্রির প্রস্তাব পাঠান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। আমরা মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা এনে ময়নাল ফকিরের মাধ্যমে নগদ ২৭ হাজার ৫ শ’ টাকা চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেই। তারপর থেকে ২৫ বছর আমরা জমিতে চাষাবাদ করে ফসল ফলিয়ে ভোগ দখল করে আসছিলাম। এরমধ্যে বারবার তাগিদ দেয়ার পরও চেয়ারম্যান আমাদের জমি লিখে দেন নি। আমরা এখনো মহাজনের টাকা শোধ করতে পারিনি। বর্তমানে এ জমির বাজার দর প্রায় ৩০ লাখ টাকা। ৩ বছর আগে তিনি আমাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে জোর পূর্বক ক্ষেতের বোরো ধান কেটে নেন। এ ব্যাপারে আমরা কোর্টে মামলা করি ও গোপালগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য লেঃ কর্ণেল ( অবঃ) মুহাম্মদ ফারুক খানের কাছে অভিযোগ করি। তিনি মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান মিয়াকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। আমরা অতিকুর রহমান মিয়ার অনুরোধে কোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহার করি। ৫ বার সালিশ বৈঠক বসান আতিয়ার মিয়া। জমি লিখে দেয়ার জন্য আমরা দাবি জানাই। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান সালিশ অমান্য করে কোন ভাবেই এটির সমাধান দেন নি। চেয়ারম্যানের পরিকল্পিত প্রতারণায় আমরা এখন দিশেহারা।
ননীক্ষির গ্রামের ময়নাল ফকির বলেন, ৩০ বছর আগে আমাদের এলাকায় ৮/১০ হাজার টাকা দরে এক বিঘা জমি বিক্রি হতো। চেয়ারম্যানের জমি রাস্তার পাশে। তাই হিন্দু পরিবারটি সাড়ে ২৭ হাজার টাকায় ২ বিঘা জমি কিনতে রাজি হয়। আমি হিন্দু পরিবারে কাছ থেকে টাকা নিয়ে চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেই। আজ দেই কাল দেই বলে চেয়ারম্যান তাদের জমি লিখে দেননি। এই সুযোগে চেয়ারম্যান ২৫ বছর পর ২০১৯ সালে তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করেছে। এটি চেয়ারম্যান খুবই অন্যায় কাজ করেছে।
ওই গ্রামের জিন্নাত আলী মৃধা বলেন, মাটির কাজ কাজ না করেই শাহজাহান মৃধার বাড়ি হতে গাববাড়ি পর্যন্ত রাস্তার টাকা ২ দফা আত্মসাত করেছেন চেয়ারম্যান। পরে ওই রাস্তায় আবার আরসিসি রাস্তার কাজ আসে। সেটি তিনি অর্ধেক অরিসিসি ঢালাই করেছেন। বাকী অর্ধেকের কাজ না করেই চেয়ারম্যান টাকা খেয়ে ফেলেছেন। তিনি আমার জমির ওপর দিয়ে জোর করে রাস্তা করেছেন। বাধা দিলেই ডাকাতি মামলায় ঢুকিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তার অত্যাচারে আমরা এবং নিরীহ হিন্দুরা অতিষ্ঠ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় হিন্দুরা জানান, চেয়ারম্যানের ছেলে রিমুর নেতৃত্বে এলাকায় মাদক ব্যবসা চলছে। ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল পুলিশ তাকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, হিন্দুদের কাছে আমি জমি বন্ধক রেখে ছিলাম। ২৭ হাজার ৫ শ’ টাকা ফেরত দিয়ে জমি ছাড়িয়ে নিয়েছি। চাকরি দেয়ার কথা বলে সুদেব ঢালির কাছ থেকে যে টাকা নিয়ে ছিলাম, তার মধ্যে ৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি। টাকা নিয়ে তাদের সাথে আমার বাক বিতন্ডা হয়েছে মাত্র। আমি তাদের কোন ভয়ভীতি বা হুমকি দেইনি। তিনি আরো বলেন, আমার ছেলেকে ৫ টি ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয়ে ছিলো। তার বিরুদ্ধে এ মাদক মামলা চলমান রয়েছে। তবে এ বিষয় নিয়ে তিনি সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য অনুরোধ করেন।
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. আতিকুর রহমান মিয়া বলেন, জমি বিক্রির বিষয়টি নিম্পত্তির জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য আমাকে দায়িত্ব দেন। আমি দু’ পক্ষকে নিয়ে ৩ দফা সালিশ বৈঠক করেছি। দু’পক্ষের কথা শুনে মনে হয়েছে চেয়ারম্যানের টাকার প্রয়োজনে জমি তাদের কাছে বিক্রি করেছিলো। কিন্তু চেয়ারম্যান দাবি করেন তিনি জমি বন্ধক রেখেছেন। চেয়ারম্যান মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি খুবই শক্তিশালী ও প্রভাবশালী তাই সালিশ মানেন নি। এমনকি হিন্দু পরিবারের টাকাও ফেরত দেন নি
Leave a Reply